কন্যাশ্রী প্রকল্প
শর্তসাপেক্ষ নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে দরিদ্র ও প্রান্তিক পরিবারের কন্যাসন্তানের অবস্থার উন্নতি ঘটানো ও ভবিষ্যৎ সুগঠিত করা।
কন্যাসন্তানকে যথাযথ ও পরিপূর্ণভাবে মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক, প্রথাগত শিক্ষা , কারিগরি ও বৃত্তিমূলক শিক্ষায় সুশিক্ষিত করে সুষ্ঠু ও সম্মানজনক পেশায় প্রতিষ্ঠা করা ও যোগ্য সামাজিক মর্যাদা সুনিশ্চিত করা।
অন্তত ১৮ বছর বয়স পর্যন্ত কন্যাসন্তানের বিবাহ বিলম্বিত করে, অপুষ্টি, মা ও শিশু মৃত্যু, নির্ধারিত শারীরিক পরিপূর্ণতার আগে গর্ভধারণ সংক্রান্ত জটিলতা ও অন্যান্য শারীরিক অসুবিধা দূরীভূত করা।
কন্যাসন্তানকে শুধুমাত্র আর্থিক সহায়তা করা কন্যাশ্রী প্রকল্পের উদ্দেশ্য নয়, কন্যাসন্তানের সম্মানজনক স্বাবলম্বনের পথ সুনিশ্চিত ও দৃঢ় করে তাকে স্বয়ম্সম্পূর্ণ মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা এই প্রকল্পের উদ্দেশ্য। এই কারণে কন্যাশ্রী মেয়েদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে সরাসরি অর্থ বরাদ্দ করা হয় যাতে খরচের সিদ্ধান্ত তারা নিজেরাই নিতে পারে।
কন্যাশ্রী প্রকল্পের আওতাভুক্ত কন্যাসন্তানের মধ্যে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও গঠনমূলক প্রতিযোগিতার আয়োজন, কন্যাশ্রী সংঘ গড়া, সমাজে সুপ্রতিষ্ঠিত মহিলাদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ তৈরি করা ইত্যাদি গঠনমূলক কাজের মাধ্যমে সমস্ত কন্যাসন্তানের মধ্যে আত্মবিশ্বাস, সামাজিক মর্যাদাবোধ ও মানসিক ক্ষমতায়নের সঠিক উন্মেষ ঘটানো।
শিক্ষার পরিবেশে থাকাকালীন মানুষের দক্ষতা ও জ্ঞানের পরিধির নিরন্তর বিকাশ ঘটে এবং কালক্রমে তা আর্থিক উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতার পথ প্রশস্ত করে। অন্তত ১৮ বছরের বয়সের পর বিবাহিতা জীবনে কন্যাসন্তান প্রবেশ করলে, তা তার পরিণত জীবনের সুঠাম ভিত্তি রচনা করতে পারে। প্রতিটি কন্যাসন্তানের উপযুক্ত বয়স হবার পর বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করা সুনিশ্চিত হলে, একদিকে যেমন বাল্যবিবাহের কুসংস্কার থেকে সমাজ মুক্ত হতে পারবে, অন্যদিকে তেমন নারীর সুস্বাস্থ্য , শিক্ষা, আর্থ- সামাজিক মর্যাদা ও সর্বোপরি আর্থিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত হবে।
শর্তসাপেক্ষ নগদ হস্তান্তর প্রকল্প পৃথিবীর বহু দেশে শিশু ও বয়:সন্ধি বয়সীদের জীবনধারার মানোন্নয়ন ঘটাতে সমর্থ হয়েছে| এই বহুল স্বীকৃত সাফল্যকে সামনে রেখে কন্যাশ্রী প্রকল্প শর্তাধীন নগদ হস্তান্তরের মাধ্যমে কন্যাশিশুর বিদ্যালয় ভিত্তিক পঠনপাঠন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হওয়া ও অন্তত ১৮ বছরের আগে বিবাহ না হওয়াকে সুনিশ্চিত করতে চায়। এই শর্তাধীন নগদ হস্তান্তর দুটি ভাগে করা হয়:
প্রথমটি হলো বার্ষিক 1000 টাকা বৃত্তি : এটি পাবার যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তগুলি হলো-
- ছাত্রীর বয়স তেরো বছরের বেশি ও আঠেরো বছরের কম হতে হবে;
- ছাত্রীকে অন্তত অষ্টম শ্রেণীতে পাঠরতা হতে হবে;
- ছাত্রীকে অবিবাহিতা হতে হবে।
দ্বিতীয়টি হলো এক কালীন ২৫০০০ টাকা বৃত্তি : এটি পাবার যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তগুলি হলো-
- আবেদন করার দিনে ছাত্রীর বয়স আঠেরো বছরের বেশি ও উনিশ বছরের কম হতে হবে;
- ছাত্রীকে মাধ্যমিক, উচ্চ-মাধ্যমিক, কারিগরি, বৃত্তিমূলক, ক্রীড়াবিষয়ক ইত্যাদি যে কোনো বিষয়ে নিবন্ধীকৃত প্রতিষ্ঠানের পাঠরত হতে হবে।
এছাড়াও প্রথম বৃত্তি পাবার অন্যান্য শর্ত অপরিবর্তিত থাকবে।
কয়েকটি বিশেষ ক্ষেত্রে বৃত্তির যোগ্যতা নির্ণায়ক শর্তগুলি প্রয়োজন অনুযায়ী শিথিল করা হয়।- বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন শিশুরা তেরো বছর বয়স হবার পরই, অষ্টম মানের থেকে নিচু শ্রেণীতে পাঠরতা হলেও অন্যান্য শর্তগুলি পূরণ হলে কন্যাশ্রীর যোগ্য বলে বিবেচিত হবে।